২৫ অক্টোবর ১৯৮৭। স্কুল খোলা থাকলেও সেদিন বাসাতেই ছিলাম। সাড়ে বারোটার দিকে বাবা বাসায় আসলেন। এই সময় তাঁর কোর্টে থাকার কথা। এসেই আমাকে বললেন, “গিয়ে দেখতো দাদার বাসায় কে যেন ফাঁসী দিয়েছে”। আমি ছুট দিলাম কথাটা শোনার সাথে সাথেই। আব্বার দাদা মানে এ্যাডঃ শীতল রায় চৌধুরী। কুন্ডির প্রখ্যাত জমিদার, কারমাইকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাদের মধ্যে একজন শ্রীযুক্ত বাবু সুরেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র। রংপুর শহরের থেকে সামান্য দূরে সদ্যপুস্করনী নামক এলাকায় এনাদের জমিদার বাড়ি। আর রংপুর শহরের কারমাইকেল কলেজ রোড এলাকায় ছিল তাঁদের শহরের বাড়ি। রংপুরের শিক্ষা, সংস্কৃতির অনেক কিছুর সূচনা হয়েছিল এই পরিবারের মাধ্যমেই। আমাদের বাসা ও তাঁর বাসার মাঝে শুধু সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি ডাক বাংলো (বর্তমান র্যাব-৫ অফিস)। আমাকে অতদুর যেতে হলো না ‘বাবু’'র মাঠেই দেখা পেলাম লিটনের। লিটন আমার বড় হলেও এক সাথেই খেলাধুলা করতাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বললো, ‘মামা ফাঁসী দিয়েছেন’। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। কারণ তার ঘণ্টা খানেক আগে আমি ‘বাবু’ কে বাজার করে নিয়ে যেতে দেখেছি। তিনি সব সময় নিজে বাজার করতেন এবং সাথে কাউকে নিতেন না। নিজেই ব্যাগ হাতে ঝুলিয়ে বাজার করে ফিরতেন।
স্ত্রী স্বর্গীয়া হিরণ্ময়ী রায় চৌধুরী, কন্যা মিতা খাঁ সহ স্বর্গীয় এ্যাড শীতল রায় চৌধুরী
লিটনের কথা শোনা মাত্রই বাসার দিকে ছুটলাম বাবাকে খবরটা দেয়ার জন্য। কিন্তু বাবা ততোক্ষণে চলে এসেছেন। আমি বললাম। তিনি ‘বাবু’র বাসায় ঢুকলেন। খুব সুন্দর গোছানো বাসা। অনেক লোক বাসায়। বাসাটাও অনেকটা জমিদার বাড়ির মতো। আসলে জমিদারদের বাগান বাড়ি। সেই বাসার ঠাকুর ঘরে গেলাম বাবার সাথে সাথে। কিন্তু কেউ ভিতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছে না। বাবা যাওয়াতে মনে হয় সবাই একটু উৎসাহিত হলো। ছোট্ট ঠাকুর ঘরটাতে প্রবেশ করলেন বাবা। সাথে আমার বন্ধু সঞ্জীব দাস বোম্বাটের ভাই মানিক দা। দেখলাম একটি শরীর ঝুলে আছে অন্ধকার ঘরটাতে। পোশাক দেখে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না উনি শীতল বাবুই। কিন্তু অন্ধকারের জন্য ঠিকমতো মুখ দেখা যাচ্ছিলো না। তখন আব্বা লাইটার জ্বালিয়ে ঝুলন্ত শরীরের মুখের কাছে নিয়ে গেলেন । দেখলেন ভালমতো এবং এক কথায় নাকচ করে দিলেন এটা দাদা নয়!! সাথে যারা ছিলেন তাদের কথাও এক। এই ব্যাক্তি শীতল রায় চৌধুরী নন। আমার খুব একটা সাহস হয়নি কাছে গিয়ে দেখার। আবার অনেককেই বলাবলি করতে শুনলাম ‘বাবু’র লাশ যদি না ই হয় তাহলে এই লোক কে? আর যার বাড়িতে এতো কিছু সেই ‘বাবু’ কোথায়? সবচেয়ে বেশী আলোচিত হতে লাগলো যে কথাটা তা হলো, ফাঁসী দিয়ে মারা গেলে তো শরীর শূন্যে ঝুলে থাকার কথা। কিন্তু এই ব্যাক্তির পা তো মাটির সাথে লাগানো। আর ঘরটার ছাদও অনেক নীচু। এটা আাত্মহত্যা না হত্যা এই বিষয়ে চলতে লাগলো গবেষণা, আলোচনা।
এ্যাডঃ শীতল রায় চৌধুরী
এরই এক পর্যায়ে পুলিশ আসলো। দড়ি কেটে লাশ নামিয়ে আনলো নীচে। আমিও দেখলাম । মুখটা কেমন যেন রক্তিম হয়ে গেছে আর অসম্ভব ফোলা ফোলা। সবার মুখে শুনলাম, ফাঁসী দেয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নাকি মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়। আর মৃত লাশের ওজন নাকি অনেক বেশী হয়। আসলে নাইলনের দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগানোর জন্য এমনটা হয়েছে। একেই তো ঠাকুর ঘরের ছাদটা ছিল নীচু তার উপর ‘বাবু’ ছিলেন একজন লম্বা ব্যাক্তি। আর নাইলনের দড়ির কারণে মৃত্যুর পর ওজন বেড়ে গেলে ফাঁসীর যে গেড়ো তা ফসকে গিয়ে শরীরটা একটু নীচে নেমে এসেছে এবং এই জন্যই তার শরীরের পা ঝুলন্ত না থেকে ছিল ঘরের মেঝেতে লাগানো।
তারপরও চলতে থাকলো বিভিন্ন রকমের কথা। কেউ বলছেন, বাড়ির পিছন দিয়ে সেই সময় কয়েকজনকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন। কেউ বলছেন জনৈক এ্যাডঃ তার কিছুক্ষণ আগেই এসেছিলেন। কেউ আবার লাশের শরীরের অনেক আঘাতের চিহ্নও নাকি দেখেছেন। এক কথায় ঘটনাটি আত্মহত্যা নয়। একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এই বিষয়টিই বেশী আলোচিত হচ্ছিল। চরম নাটকীয় অবস্থার সৃষ্টি হলো যখন পুলিশ লাশের পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ছোট্ট একটা চিরকুট উদ্ধার করলো তখন। চিরকুট টাতে লেখা ছিল , “আমার একাকীত্বের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আমি আত্মহত্যা করলাম। আমার মৃত্যুর জন্য কেহই দায়ী নয়”। স্বাক্ষরও আছে চিরকুটের নীচে। কিন্তু ‘বাবু’’র সহকর্মী, রংপুরের সিনিয়র আইনজীবী সারোয়ারুল আলম দুদু কিছুতেই মানতে রাজী নন এই লেখা শীতল দা’র। এভাবেই চলতে থাকলো আলোচনা, শঙ্কা, উৎকণ্ঠা আর নানা রকমের গুজব। আর গুজবের পিছনে মূল কারণ হলো শীতল রায় চৌধুরী বিপুল জমি জমা ও সম্পত্তি। আজ এতোদিন পড়ে মনে করতে পারছি না তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সেদিনই সম্পন্ন হয়েছিল না পরের দিন। শীতল বাবুর দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে কেউই রংপুরে থাকতেন না। দুই ছেলে থাকতেন কলকাতায়। আর একমাত্র মেয়ে ঢাকায়।
রংপুর জেলার প্রসিদ্ধ কুন্ডির জমিদার সুরেন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরীর রংপুরের বাসা। কলেজ রোড।
এখন আমি শীতল রায় চৌধুরীদের পরিবার সম্পর্কে একটু উল্লেখ করতে চাই। শীতল রায় চৌধুরীর বাবা সুরেন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী হলেন রংপুর জেলার প্রসিদ্ধ কুন্ডির জমিদার বংশের জমিদার। সদ্যপুস্করনী (শহর থেকে ১২/১৩ কি.মি দূরত্ব)তে তাদের মূল জমিদার বাড়ি ছিল। আর রংপুরের বাসাটা অর্থাৎ যে বাসার কথা আমি বলছি তা ছিল সুরেন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরীর শহরের বাড়ি। এই বাড়িও সেই সময় অনেক অভিজাত ছিল। সুরেন্দ্র নাথ রায় চৌধুরী সম্পর্কে আমার লেখার ইচ্ছা আছে। আজকে সে বিষয়ে আর যাচ্ছি না । শুধু একটু বলতে চাই তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী, শ্রেষ্ঠ চিন্তাশীল সাহিত্যিক ও ইতিহাস গবেষক ছিলেন। তারই একক প্রচেষ্টায় ১৯০৫ সালে রংপুরের প্রতিষ্ঠিত হয় কলিকাতাস্থ “বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ”র শাখা “রংপুর সাহিত্য পরিষদ”। সুরেন বাবু যেমন চিন্তাশীল গবেষক, সাহিত্যিক ছিলেন তেমনি ছিল তার প্রচুর অর্থ বৈভব। মিঃ জে.এন গুপ্ত যখন রংপুরের কালেক্টর ছিলেন তখন সুরেন বাবু রংপুরে একটি প্রথম শ্রেণীর কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তারই ফসল আজকের কারমাইকেল কলেজ। তিনি ছিলেন এই কলেজের প্রথম সম্পাদক ও একজন প্রধান সহকর্মী। কলেজের ভবন নির্মাণের জন্য এনারা দুই ভাই অর্থাৎ সুরেন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী ও মনীন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী তথা কুন্ডির জমিদার বংশের পক্ষ থেকে দেয়া হয় ৪১৯ বিঘা (মোট ৯৫০ বিঘার কারমাইকেল কলেজ) নিষ্কণ্টক জমি। কারমাইকেল কলেজের ফার্স্ট বিল্ডিং এর পিছনে যেখানে ভিত্তিপ্রস্তর এর শিলালিপি আছে সেখানে এবং কলেজের জি.এল হলের (অডিটোরিয়াম) সামনেও এমনই একটি লেখা থেকে এই কথার সত্যতা পাওয়া যায়। তাছাড়া তার কলেজ রোডস্থ শহরের বাসার চারপাশের জমির মধ্যে থেকে তিনি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, শ্রী শ্রী আনন্দময়ী সেবা শ্রমকে অনেক জমি দান করেন। তারপরও ঐ এলাকার তাঁর প্রচুর ভূসম্পত্তি ছিল। ছিল বিশাল এক পুকুর। আশে পাশের কয়েকটি মহল্লার মানুষ ঐ পুকুরে গোসল করতো, ধোপারা কাপর ধুয়ে সেই পুকুরের পাড়েই শুকিয়ে নিতো। সেই সময়ে আলমনগর-কলেজ রোড এলাকায় ঐ পুকুর এক নামে পরিচিত ছিল; ‘বাবু’র দীঘি।
সেই জমিদার সুরেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরীর দুই পুত্র হলেন সৌরেন্দ্র রায় চৌধুরী ও শীতল রায় চৌধুরী। জমিদারি প্রথা উঠে যাবার পর শীতল রায় চৌধুরী কলকাতা রিপন কলেজ থেকে আইন পাশ করেন। এবং রংপুরের আদালতে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ছিলেন খুবই সৌখিন এবং অত্র অঞ্চলের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তি। আমরা তার বাসার সামনের মাঠে ফুটবল খেলতাম। তার সুন্দর বাড়ির জানালার কাঁচ ভাঙ্গার জন্য অনেক বকা খেতাম। কিন্তু তিনি কখনও খেলতে নিষেধ করতেন না। প্রতিদিন বিকাল বেলা তাঁকে দেখতাম লন টেনিসের র্যাকেট হাতে নিয়ে চললেন লন টেনিস ক্লাবে।
কুন্ডির জমিদার সুরেন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরী
দেশ স্বাধীনতার সময় তিনি কোথায় ছিলেন এই তথ্যটা আমার জানা নেই। কিন্তু তার আগেই তার ১ম পুত্র কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর দ্বিতীয় পুত্রও পিতাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে রাজী করাতে না পেরে একাই চলে যান কলকাতায়, অনেকটা অভিমান করে। এখনও তাঁরা সেখানেই অবস্থান করছেন। একমাত্র মেয়ে মিতা রায় চৌধুরী (মিতু আপা, এখন মিতা খান)’র বিয়ে হয় রংপুরের এক পুলিশ দারোগার পুত্রের সাথে। যিনি একজন সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করে এখন বোম্বে সুইটস’র একটি বড় প্রশাসনিক পদে চাকুরী করছেন। মৃত্যুর কিছুদিন পরই শীতল বাবুর দেয়াল আলমিরা থেকে একটি ব্রীফকেস উদ্ধার করা হয়। যাতে ছিল নগর ২৫ হাজার টাকা এবং একমাত্র কন্যাকে সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি উইল করে দেয়ার কাগজ পত্র। নসিহত নামা। দুই পুত্র সন্তান তাঁর কথার অবাধ্য হয়ে কলকাতায় চলে যাবার জন্য তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি থেকে তাদের বঞ্চিত করেছিলেন। সমস্ত সম্পত্তি পান তার একমাত্র কন্যা মিতা রায় চৌধুরী।
কুন্ডির জমিদারদের ব্যায়ে নির্মিত কলেজ রোডের শ্রী শ্রী আনন্দময়ী সেবাশ্রম। সংলগ্ন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় এনারা জমি দান করেন
গত ২০০৮ সালের এপ্রিলে তার দ্বিতীয় সন্তান আনন্দ দাদা (আনন্দ মোহন রায় চৌধুরী)’র সাথে কলকাতায় আমার দেখা হয়েছিল। আমি দেখেছি একদা জমিদার বংশের ছেলে সেই আনন্দ দাদা কলকাতায় কত কষ্ট করে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। থাকেন উত্তর চব্বিশ পরগনায়। একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানীতে চাকুরী করেন। অথচ যেসময় তিনি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তখন তিনি বাংলাদেশেই যে চাকুরী করতেন তা করলে আজ...! তিনি রসায়ন থেকে এম.এস.সি করেছিলেন। ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অন্য ভাই বাচ্চা দা থাকেন দমদম এলাকায়। তার সাথে আমার দেখা না হলেও আম্মা ও আব্বা তাদের বাসায় গিয়েছিলেন। তাদের মুখেই শুনেছি দুই রুমের একটি বাসায় কত কষ্ট করে জীবনটাকে বয়ে নিয়ে চলেছেন কারমাইকেল কলেজে ৪১৯ বিঘা জমি দানকারী জমিদার সুরেন বাবুর নাতি!
১৯৮৫ ইং সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাঁর স্ত্রী হিরণ্ময়ী রায় চৌধুরী। মূলত তার পর থেকেই তিনি সম্পূর্ণ একা হয়ে যান অতবড় বাসাটাতে। দুই ছেলে থেকেও নেই। মেয়ের বিয়ের পর সে জামাইয়ের সাথে ঢাকায়। একাকীত্ব তিনি অনুভব করতেই পারেন। তার চাকর বাকররাই সব দেখা শোনা করতেন। দুই একজনের কথা আমার মনে আছে। যেমন কেষ্ট। আজব ছুচিবায়ুগ্রস্ত এক লোক। যতবার বাড়ির বাহিরে বের হতেন বাসায় ফিরে গিয়ে তাকে স্নান করতে হতো। ইন্দারা থেকে ছোট বালতি দিয়ে পানি তোলার ঝামেলায় না গিয়ে সে বড় বালতিই ইন্দিরায় নামিয়ে দিতেন। আর তোলার সময় বেশী ওজনের জন্য তা ছিঁড়ে পড়তো। আর দিনে গড়ে ২ বার করে আমাদের বাসা থেকে তাকে ইন্দারা থেকে ‘বালতি তোলা কাটা’ নিয়ে যেতে হতো। এবং তা ফিরিয়ে দিয়ে যাওয়ার পর অবধারিত গোসল। আর একজনের কথা মনে আছে যাকে সবাই বলতো সপ্তমীর মা। আর একজন ছিল বাচ্চু। এই ছিল স্ত্রী মারা যাবার পর প্রতাপশালী ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ্যাডঃ শীতল রায় চৌধুরীর শেষ একটি বছরের সংসার। পূজা বা বিশেষ কোন অনুষ্ঠান থাকলে পাশের বাসার বাসনা পিসীকে দিয়ে রান্না করিয়ে নিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করতেন। আর একজন তার রান্না করে দিতেন । তিনি হলেন কারমাইকেল কলেজের ফিজিক্সের অধ্যাপক বলাই পাল এর স্ত্রী ও একই কলেজের বাংলার সহকারী অধ্যাপক মঞ্জুলা পাল। এই অধ্যাপক দম্পতি তখন ওনার বাসার পিছনে এক কোর্ট ইন্সপেক্টরের বাসায় ভাড়া থাকতেন। সেই বাসা ছিল বর্তমানে রংপুর কমার্স কলেজের সহকারী অধ্যাপক শান্তনু পাল টুটুলদের। একাকীত্ব শীতল বাবুর লাগতেই পারে। এবং কিছু একটা করার যে তিনি আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তার প্রমাণ মেলে তাঁর নসীহতনামা দেখে।
কিন্তু ঐ দিনেই যে তিনি এমন কাজ করবেন তা কি তিনি মাত্র দুই ঘণ্টা আগেও ভেবেছিলেন? ফাঁসী দেয়ার দিনও তিনি প্রতিদিনের মতো তেঁতুল তলা কাচা বাজারের থেকে কই মাছ কিনে আনেন এবং মঞ্জুলা ম্যাডামকে দিয়ে বলেন ভাল করে রান্না করার জন্য। বাজার করে ফেরার পথে আমাদের বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে কি যেন একটা বলেছিলেন মনে নাই এখন আর। বাজার শেষে ফেরার পথে মোড়ের আবুলের মুদী দোকান (শাপলা চত্বরের এখনকার ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ইত্যাদি সংলগ্ন) নাইলনের দড়ি কেনেন। তারও আগে তিনি যান রংপুরের সেই সময়ের প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত কাকার বাসায়। প্রশান্ত বাবুর বাসা হলো রহমান পেট্রোল পাম্পের পাশে, গণী উকিলের বাসার মুখোমুখি। মঞ্জুলা ম্যাডামকে বাজারের ব্যাগ দিয়ে তিনি বাসায় ঢোকেন এবং যথারীতি স্নান, সেভ করা শেষ করে ঠাকুর ঘরে যান প্রাত্যহিক রুটিন মতো। সেটাই তার জীবনের শেষ ঠাকুর ঘরে যাওয়া। সেই ঘর থেকে বের হয়েছে তার লাশ। জলজ্যান্ত শীতল রায় চৌধুরী নন।
তার মৃত্যুর পর থেকে রংপুর শহরে জোড় গুজব ছিল যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আস্তে আস্তে তা মানুষের মন থেকে মুছে গেছে। যদিও তার মেয়ে জামাই এবং মেয়ে জামাইয়ের ভাইদের কর্মকাণ্ড এখনও মানুষকে মনে করিয়ে দেয় তাকে হত্যা করা হয়েছে এই কথাটা
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস