সুরেন্দ্রচন্দ্র রায়চৌধুরী ১৮৭৬ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী বৃহত্তর রংপুর জেলার অন্তর্গত শ্যামপুরের নিকটবর্তী সদ্যপুস্করিণী গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মধুসূদন রায় চৌধুরী এবং মাতার নাম মহামায়া দেবী চৌধুরী। সুরেন্দ্রচন্দ্র রায়চৌধুরী ছিলেন রংপুরের বিখ্যাত কুন্ডি জমিদার বংশের সন্তান। কুন্ডির জমিদার বংশ সতের শতকে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বনেদী জমিদার বংশ হিসাবে তাদের খ্যাতি ছিল। মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে সুবেদার মানসিংহ মোগল বাহিনী নিয়ে এই স্থানেই শিবির স্থাপন করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে—মোগল সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজনে এখানে একটি পুকুর খনন করা হয় এবং এ-ঘটনা থেকেই গ্রামের নাম সদ্যপুস্করিণী। জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার সম্পাদিত ‘বংশ পরিচয়’ গ্রন্থমালার ৩য় খন্ডে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী সতের শতকের প্রথমভাগে কুন্ডির জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠা হয়। কুন্ডি পরগনা মোগল শাসনাধীনে আসে আকবরের রাজত্বের শেষের দিকে। বাংলার সুবেদার মানসিংহ দক্ষিণবঙ্গের বিদ্রোহী ভুঁইয়া প্রতাপাদিত্যকে পরাজিত করে যখন উদায়নালার পথে উত্তরবঙ্গের দিকে অগ্রসরমান, তখন তাঁর পুরোহিতের মৃত্যু হয়। এই পরিস্থিতিতে মানসিংহ কটোয়ার সন্নিকটে
আঙ্গারপুর চরখিয়া নামক এক গ্রামের শঙকর মুখোপাধ্যায়কে পুরোহিত হিসেবে বরন করেন। শঙকর মুখোপাধ্যায় তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র কেশবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে সাথে নিয়ে উত্তরবঙ্গে আসেন। সে সময় কুন্ডি সূর্যকুন্ডি ও ফকিরকুন্ডি নামে পরিচিত ছিল। মোগল বাহিনী এই কুন্ডি দখল করে এবং সরকার বাজুহার অন্তর্ভূক্ত করে। কুন্ডিতে মোগল আধিপত্য বজায় রাখার জন্য মানসিংহ শঙকর মুখোপাধ্যায়কে সুবেদার নিযুক্ত করেন। এবং কুন্ডি পরগনা তাকে জায়গির হিসেবে প্রদান করেন। পরবর্তীকালে শঙকর মুখোপাধ্যায় দিল্লি গমন করেন এবং তৎকালীন মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নিকট থেকে কুন্ডি পরগনার জমিদারিও রায়চৌধুরী উপাধি পান। একই সাথে শঙকর মুখোপাধ্যায় নিশান, হাতি ইত্যাদি ব্যবহারের অনুমতিও পান। এভাবে কুন্ডিতে যে-জমিদার বংশের উদ্ভব ঘটে তা রংপুরের সামাজিক অর্থনৈতিক এবং সাংষ্কৃতিক জীবনে মূল্যবান অবদান রাখতে সমর্থ হয়। প্রকৃতপক্ষে সমকালীন পরিস্থিতিতে সম্রাটের আশীর্বাদপুষ্ট এসব জমিদার বংশ কিছুটা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা সৃষ্টিতে সহায়কহয়। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভ করে এবং এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের সমুদয় ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়। প্রথম দিকে রাজস্ব ব্যবস্থা পরিচালনায় ত্রূটি থাকলেও ভূমি নিয়ন্ত্রণে বনেদী জমিদার পরিবারের প্রধান্য কোনো কোনো অন্চলে অব্যাহত থাকে। কুন্ডির জমিদার ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির স্বীকৃতি লাভ করে ১৭৭৭ সালের পর।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ১৮৭৩ সালে রংপুরের অতিরিক্ত সহকারী কালেক্টর বাবু গোপালচন্দ্র দাস লিখেছেন:
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস